আজ রবিবার। ২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ। ৯ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ। ৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি। এখন সময় রাত ১২:৫১

বজলুল হুদার কবরের নামফলক গুঁড়িয়ে দিল ছাত্রলীগ ।

বজলুল হুদার কবরের নামফলক গুঁড়িয়ে দিল ছাত্রলীগ ।
নিউজ টি শেয়ার করুন..

বরখাস্ত মেজর বজলুল হুদার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দায়ে। তাকে পুলিশি নিরাপত্তায় সমাহিত করা হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায় নিজ এলাকায়। অথচ তার কবরে থাকা নামফলকে পরিচয় লেখা হয়েছে ‘জাতীয় বীর’, ‘মৃত্যুঞ্জয়ী বিপ্লবী জননেতা’ ও ‘শহীদ’। আর জানাজানি হওয়ার পর সেই নামফলক ভেঙে দিয়েছে ছাত্রলীগ কর্মীরা।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নগর বোয়ালিয়া গ্রামের কবরস্থানের বঙ্গবন্ধুর খুনিকে দাফন করা হয়েছিল। শনিবার রাতের আধারে কবরস্থানের ফটকে এসব লেখা সম্বলিত ফলক দেবার ঘটনা জানাজানি হয়। পরে ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা স্থানীয় এলাকাবাসীদের সহযোগিতায় সোমবার দুপুর ৩টায় ওই নামফলক ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়।

বঙ্গবন্ধুর খুনি বজলুল হুদাকে ‘জাতীয় বীর’, ‘মৃত্যুঞ্জয়ী জননেতা’ বা ‘শহীদ’ উপাধি দিয়ে নামফলক করার ঘটনাকে ঘৃন্য বলেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। তারা বলছেন, বঙ্গবন্ধুর মত নেতার খুনির স্বজনদের এমন আস্ফালন কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না।

২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি বজলুল হুদার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। পরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে তাকে দাফন করা হয় নিজ গ্রাম চুয়াডাঙ্গার নগর বোয়ালিয়া গ্রামে।

স্থানীয় বাসিন্দা রবজেল আলী জানান, লাশ দাফনের কয়েক বছরের মাথায় গত বছরের ২৮ অক্টোবর বজলুল হুদার কবরস্থানের ফটকে তাকে ‘জাতীয় বীর’ ও ‘মুক্তিযোদ্ধা’ আখ্যায়িত করে তার স্বজনরা নাম ফলক বসান। অনেকটা গোপনে এমন কাজ করলে কয়েকদিন পর বিষয়টি গ্রামের মানুষদের নজরে আসে। এ ঘটনার কয়েকদিনের মাথায় শনিবার রাতের আধারে আবারো একই নামফলক বসানো হয় বজলুল হুদার করবস্থানের ফটকে। রবিবার রাতে বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয় গোটা চুয়াডাঙ্গা জেলায়। এই ঘটনা নিয়ে নগর বোয়ালিয়া গ্রামেও উত্তেজনা ছড়াতে থাকে।

খবরটি জানতে পেরে সোমবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জানিফ আহম্মেদের নেতৃত্বে জেলা ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী ঘটনাস্থল নগর বোয়ালিয়া গ্রামে পৌঁছান। এরপর তারা স্থানীয় গ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে দেন নামফলকটি।

 

 

চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জানিফ আহম্মেদ বলেন, ‘একজন বিশ্ব নেতার খুনির এমন আস্ফালন কোনভোবেই মেনে নেওয়া যায় না। আর তাই ওই খুনির কবরস্থানের নাম ফলক গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’ জানিফ আরোও বলেন, ‘বাংলাদেশের যে প্রান্তেই স্বাধীনতাবিরোধী ও খুনিদের অপতৎপরতা, সেখানেই ছাত্রলীগের প্রতিবাদ প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে।’

আলমডাঙ্গা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার শফিউর রহমান জোয়ার্দ্দার সুলতান বলেন, ‘এমন ঘৃন্য কাজ কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যে বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছে, খুন করার পর প্রকাশ্যে তা স্বীকার করেছে, তাকে জাতীয় বীর, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ হিসাবে আখ্যায়িত করা গোটা মুক্তিযোদ্ধার চেতনার পরিপন্থী। এটার মধ্য দিয়ে খুনি বজলুল হুদার পরিবার ও স্বজনরা দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করেছে।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামীলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক মাসুদুজ্জামান লিটু বলেন, ‘এ ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে খুঁজে আইনের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে এসব ষড়যন্ত্রকারী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকৃতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে আওয়ামী লীগ।

তবে এ ঘটনা নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন।

প্রসঙ্গত. ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে ধানমন্ডির বাসায় পরিবারসহ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। জঘন্যতম এই হত্যার অন্যতম হোতা ছিলেন মেজর বজলুল হুদা।

১৯৯১ সালে এক জনসভায় বজলুল হুদা প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিবকে আমি নিজের হাতে গুলি করে মেরেছি। কার সাধ্য আছে আমার বিচার করার? এদেশে শেখ মুজিব হত্যার বিচার কোনোদিনই হবে না।’ তিনি আরও বলেছিলেন ‘সেদিনই এদেশে শেখ মুজিব হত্যার যেদিন বিচার হবে, সেই দিন আমার হাতের তালুতে চুল গজাবে।’

বঙ্গবন্ধু হত্যার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে এই মামলার বিচার কাযক্রম শুরু হয়। সকল বাঁধা বিপত্তি শেষে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বজলুল হুদার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।


নিউজ টি শেয়ার করুন..

সর্বশেষ খবর

আরো খবর