ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অথবা জানুয়ারিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই হিসেবে অক্টোবরে তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা একাধিক অনুষ্ঠানে এমনটিই জানিয়েছেন।
আর এ কারণে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ যাচাই-বাছাই ও পর্যবেক্ষণের নীতিতে চলছে আওয়ামী লীগ। যদিও নানা মাধ্যমে নৌকার কিছু ‘খসড়া প্রার্থী তালিকা’ প্রকাশ পেয়েছে। তবে বিষয়টি পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষনেতা।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, তিন দফায় সারাদেশের তৃণমূলের নেতাদের গণভবনে ডেকে বিশেষ বর্ধিত সভায় জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে সারাদেশে একাধিক জরিপ চালানো হয়েছে। আগামী অক্টোবরে আরেকটি জরিপ কার্যক্রমের ফল দলীয় সভাপতির কাছে জমা হবে। তার আগে মনোনয়নের বিষয়ে অনুমান পর্যন্ত করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দলটির সংশ্লিষ্ট নেতারা।
এবারের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে ভেবেই এগুচ্ছে আওয়ামী লীগ। সূত্র জানিয়েছে, সে কারণেই প্রার্থীদের খসড়া তালিকা প্রণয়ণে সব ধরনের বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ করছেন স্বয়ং আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সূত্র জানায়, এখনও মাঠ জরিপ অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি প্রাপ্ত জরিপ পর্যবেক্ষণ করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নীতি-নির্ধারকরা। অংশহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। শীর্ষ পর্যায়ের নীতি-নির্ধারক যে কয়েকজন নেতার মনোনয়ন প্রশ্নাতীত, তাদের ক’জন ছাড়া বাকি কারো বিষয়েই কেউ কোনো তথ্য এখনও জানেন না। এমনকি মন্ত্রিত্বে রয়েছেন— এমন অনেকেই এখনও জানেন না তাদের মনোনয়ন নিয়ে সবশেষ সিদ্ধান্ত কী।
সংবাদমাধ্যমে মনোনয়নের যেসব তালিকা আসছে, সেগুলো ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে একাধিক নেতা বলেছেন, এগুলো মনগড়া, ভুয়া তালিকা। এর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক নেই। আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে পর্যন্ত প্রার্থীর স্বচ্ছতা, জনপ্রিয়তা ও যাচাই-বাছাই অব্যাহত থাকবে; এরপরেই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে— এমনটা বলেছেন ওই শীর্ষ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট নেতারা।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য ও দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য রাশেদুল আলম বলেন, প্রথম সারির শীর্ষ পর্যায়ের কিছু নেতার মনোনয়ন এমনিতেই চূড়ান্ত থাকে। কেবল সেগুলোর কথাই বলা যায়। এর বাইরে কে কে নির্বাচনে নৌকার টিকেট পাবেন, তা বলার সময় এখনও হয়নি। এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি।
মনোনয়নের খসড়া তালিকা চূড়ান্ত করা নিয়ে যেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে, তার কোনোটিরই কোনো ভিত্তি নেই বলেও জানান সরকার দলীয় এই নেতা।
নির্বাচনে অংশ নিতে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগে পুরোদমে জোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে— এমনটি নিশ্চিত করে দলের একাধিক নেতা বলেন, বিএনপি তাদের দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত হওয়াকে কেন্দ্র করে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে টালবাহানা করলেও ভেতরে ভেতরে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে কারণে নির্বাচনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে তিন দফায় তৃণমূলের নেতাদের গণভবনে ডেকে জাতীয় নির্বাচনের বার্তা দিয়েছেন— এমনটা জানিয়ে নেতারা বলেন, নির্বাচনি মিশন-ভিশনের পরোক্ষ-প্রত্যক্ষ নির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় প্রধান।
টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করা চ্যালেঞ্জিং হবে— এমনটাই মনে করছে দলের হাই কমান্ড। এ কারণে ধাপে ধাপে লক্ষ্য-কৌশল নির্ধারণ করে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে আগামী নির্বাচনে ‘জয়যোগ্য’ প্রার্থীকেই নৌকা উপহার দেওয়া হবে।
কোনো বিশেষ মহল বা গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হলে শেখ হাসিনা কাউকে মনোনয়ন দেবেন না— এমন মত দিয়ে নেতারা জানান, বিশেষ কয়েকটি ক্রাইটেরিয়া পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে নৌকার প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। তবে এর আগের মেয়াদগুলোতে তফসিল ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী চূড়ান্তের প্রক্রিয়া শুরু হলেও এবার তফসিল ঘোষণার আগেই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান তারা।
সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বা না করার ভিত্তিতে প্রার্থী মনোনয়নে সংযোজন-বিয়োজন হবে বলেও জানান এই নেতারা। তারা বলছেন, এবার তিন ধাপে দলীয় মনোনয়ন প্রক্রিয়ার কাজটি করা হচ্ছে।
এদিকে, সূত্র জানিয়েছে, তিন দফায় সারাদেশের তৃণমূলের নেতাদের গণভবনে ডেকে বিশেষ বর্ধিত সভায় জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে সারাদেশে একাধিক জরিপ চালানো হয়েছে। আগামী আগস্টে আরেকটি জরিপ কার্যক্রমের ফল দলীয় সভাপতির কাছে জমা হবে। তার আগে মনোনয়নের বিষয়ে অনুমান পর্যন্ত করা যাচ্ছে না, বলেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।
দলীয় সূত্র আরও জানায়, গত ৫ জুলাই সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনের নবম তলায় সরকারি দলের সম্মেলন কক্ষে আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের বৈঠকে দলীয় এমপিদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেছেন, দলের ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করুন, যেখানে যতটুকু দূরত্ব আছে তা দ্রুতই ঘুচিয়ে ফেলুন।
ওই বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক এমপি-মন্ত্রীর জরিপ রিপোর্ট আমার কাছে আছে। জরিপ ও তৃণমূলের মূল্যায়নের মাধ্যমে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তার পক্ষেই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আগামী নির্বাচনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ— যেভাবেই হোক বিএনপি নির্বাচনে আসবে। তাই আগামী নির্বাচন অত্যন্ত কঠিন হবে। সেভাবেই নির্বাচনের জন্য সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মনোনয়ন নিয়ে যেসব খবর হচ্ছে সেগুলো ভিত্তিহীন, ভুয়া ও বানোয়াট। কোনো বাস্তবতা নেই। অনুমানের ভিত্তিতে করা হয়েছে।
তবে এবার একটু আগেভাগেই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে— এমনটি জানিয়ে ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, আগে যেমন তফসিল ঘোষণার পর পরই মনোনয়নের কাজ হতো, এবার তেমন হবে না। চূড়ান্ত তালিকা পরে হলেও এখন থেকেই চলছে যাচাই-বাছাই, বিচার-বিশ্লেষণ, পর্যালোচনা- পর্যবেক্ষণের কাজ।
কারো নাম চূড়ান্ত হয়েছে কি— এমন প্রশ্নের জবাবে দলের সিনিয়র এই নেতা বলেন, হলেও সেটা একমাত্র আমাদের মাননীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই জানেন।
নির্বাচনি জোটের রূপরেখা নির্ধারণের লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে জোটের রূপরেখা একরকম হবে, না এলে হবে অন্যরকম।