
উঠতে বসতে আমরা সুশিল প্রজন্ম ছাত্রলীগের নাম শুনলেই পারলে তাদের হারপিক দিয়া ওয়াশ করি। ইনিয়ে বিনিয়ে তাদের নানা দোষ খুঁজে প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করতে না পারলে যেনো রাতে ঘুম হয়না। এটা অনেকটা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আমাদের জ্ঞানীব্যক্তিরা তির্যক বাক্যবানে তাদের ঝাঝরা করেন। কলাম লেখকরা তাদের নিত্য সময় জ্ঞান দিয়ে যান বিনে পয়সা। কিন্তু আসলে কি এটা ঠিক! একটু সমালোচনার মাধ্যমে হয়তো সাময়িক বাহবা মেলে। জাতির সামনে একটি সংগঠনকে ভিলেনরুপে জাহির করে হয়তো অনেকক্ষেত্রে টু-পাইস ইনকামও হয়।
কিন্তু একটিবার ভেবে দেখেছি, ছাত্রলীগের ইতিহাস-ঐতিহ্যর কথা?
কতো রক্ত আর ত্যাগের ফসল আজকের সংগঠন। কতো মানুষের নিরলস শ্রম আর ঘামে স্বাধীকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া এ সংগঠনটির অগ্রযাত্রা। নাহ, আমরা স্বার্থের মায়ায় সব সত্যকেও মিথ্যা বলতে পারি। কলুষিত করতে পারি সব ভালো কাজকেও। জীবন বাজি রেখে নদীতে ডুবে যাওয়া ৯ ছাত্রীকে উদ্ধার করা কাপ্তাইয়ের ছাত্রলীগ নেতা লিমনের স্তুতি আমরা গাই না। আমরা অন্ধ হয়ে যাই যখন রোহিঙ্গাদের একটু প্রশান্তির জন্য ছাত্রলীগের কর্মীরা দিনের পর দিন রোদ পুড়ে-বুষ্টিতে ভিজে রোহিঙ্গা শিবিরে হেলথ ক্যাম্প খোলা রাখে। আমাদের কলম বন্ধ হয়ে যায় যখন মুমূুর্ষ রোগীদের রক্তের প্রয়োজনে ছাত্রলীগের কর্মীরা পরম মমতায় ছুটে যায়। আমরা সত্যিই অন্ধ, আমরা ভালোকে ভালো বলতে ভয় পাই ।
আমরা তর্কের প্রয়োজনে ভুলে যাই ৫২, ৬৬, ৬৯, ৭০, ৭১ এর কথা। পাকিস্তানিদের বুলেট আর কারাগারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাংলাদেশ নামটি মুখে নিয়েছিলো ছাত্রলীগের বঙ্গবন্ধু পাগল কর্মীরাই। ৩৭ হাজার ছাত্রলীগ কর্মীর তপ্ত রক্তই স্বাধীনতার পথকে প্রশস্ত করেছে। এতো সহজেই এমন অবদানকে অস্বীকার করে সুশিল সাজার মধ্যে কোনও মহত্ব নেই। গণতন্ত্র সুরক্ষায় পঙ্গু হয়েছে, চোখ হারিয়েছে, হাত হারিয়েছে এমন সংখ্যাতো হাজারে হাজার। ছাত্রলীগের রক্তধারায়ই গনতন্ত্রের পথে যাত্রাটা এতো সহজ ।
একবার কি খেয়াল করি এই দেশে কারা রাজনীতি করছেন?
রাজনীতিটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন, কারা নিচ্ছেন?
যেহেতু গণতন্ত্রের দেশ সেহেতু দেশটা কার্যত রাজনীতিবীদরাই চালান, চালাবেন। এটা তো জানি, তাই না? কিন্তু দেশের কয়টা মেধাবীমুখ রাজনীতি করে বলতে পারেন? শিক্ষাঙগনের মেধাবী তুখোর শিার্থীদের ৯৯.৯৯% উদ্দেশ্য- হয় ডাক্তার না হয় ইঞ্জিনিয়ার হবে। এটাই তাদের স্বপ্ন! নতুবা ভাল দামী কোন সাবজেক্ট নিয়ে পড়বে যাতে জীবিকা নির্বাহটা স্বাভাবিক থাকে, বাবা মায়ের মুখটা উজ্জল করে, সমাজে প্রতিষ্ঠা পাওয়া যায়, সম্মান পাওয়া যায়।
জানা আছে ? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হতে হলে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় শীর্ষে থাকতে হয়। এমন একটি বিভাগে পড়েও ফুলটাইম ছাত্ররাজনীতি করা চাট্টিখানি কথা না। ছাত্রলীগের ঘোষিত নতুন কমিটির শীর্ষ দুই নেতাই আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। রয়েছে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ও শিক্ষাজীবন।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে চিনেন? যার রক্ত ধারায় কেবল দেশপ্রেমের জিকির। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বহমান। শিক্ষাজীবনের সবক্ষেত্রে ভালো রেজাল্টধারী এই ছেলেটি কেবল রাজনীতিকে বেছে নিয়েছেন দেশ মাতৃকার মঙ্গলে। প্রাইভেটকারের ধাক্কায় শহীদ মিনারের পাশে যখন একজন রিকসাওয়ালা মৃত্যুপ্রায়। সবাই নিরব দর্শক হয়ে থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। পরম মমতায় তাকে কোলে তুলে নিয়ে গেছেন হাসপাতালে। চিকিৎসা আর পরিবারের ভরণপোষনের দায়িত্ব পালন করেছেন আপন সন্তানের মতোই। শারীরিক প্রতিবন্ধী অদম্য মেধাবী সন্তানদের অবহেলার স্বীকার অসুস্থ দুইজন মায়ের ভরণপোষনসহ শত শত ঘটনার নিরব জনক তিনি। ছাত্র রাজনীতি করা একটি ছেলে যখন নিজের হাত খরচের জন্য বড় ভাইদের দুয়ারে হাত পাতে । ঠিক তখন একজন গোলাম রাব্বানী হাত খরচের টাকা বাচিঁয়ে দাড়িয়েছেন মানুষের পাশে। একই সঙ্গে ভালোবেসেছেন রাজপথ ও মানুষকে। সমালোচনা থাকবে। সমালোচনা করাটা যেমন আপনাদের অধিকার, ঠিক তেমনি ভালো কাজের প্রশংসা পাওয়াটাও ছাত্রলীগের অধিকার।
লেখকঃ ইমতিয়াজ আবরার সাইমুম , একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।