আজ সোমবার। ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ। ১০ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ। ৯ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি। এখন সময় রাত ১০:৩৬

ছাত্রলীগে বিবাহিত নেতার হিরিক।

ছাত্রলীগে বিবাহিত নেতার হিরিক।
নিউজ টি শেয়ার করুন..

দ্যাটাইমসঅফবিডি.কম: ঢাকা -সোমবার-২০ আগস্ট ২০১৮ : ০৩ ভাদ্র ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

২০১৭ সালের ১২ই জুলাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় ছাত্রলীগের বিবাহিত নেতাদের পদ ছেড়ে দিতে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিলো। এ সময়ের মধ্যে বিবাহিত নেতারা পদত্যাগ না করলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন গনমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন৷ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সেই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ঘোষনার ১ বছর পার হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব ঘোষনা করা হয়েছে কিন্তু সেই স্বিদ্ধান্ত আর বাস্তবায়ন হয়নি। দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক পদে বিবাহিতরা দিব্যি বহাল আছে। দু’একজন স্বেচ্ছায় পদ ছেড়ে দিলেও বেশীর ভাগ বিবাহিতরা স্ত্রী-সন্তান থাকার পরো ছাত্রলীগের সাংগঠনিক পদ ব্যবহার করছে।

এই বিষয়ে ছাত্রলীগের বিগত কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক মন্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রেসকে বলেন, আমাদের বিগত কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক নতুন নতুন কমিটি গঠন নিয়েই বেশী ব্যস্ত ছিলেন৷ কাউকে একবার বহিষ্কার করে তো আবার কিছুদিন পর সেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নিতো। বিগত কমিটির অনেক সাংগঠনিক পদে বিবাহিত এমনকি সন্তানের বাবারাও স্বপদে বহাল থাকার নজির ছিলো৷ মূলত সংগঠনের এই দুই শীর্ষ নেতা সংগঠন পরিচালনায় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিলেন উল্লেখ করে এই সাবেক ছাত্র নেতা বলেন, কেন্দ্রের নজরদারীর অভাবে নেত্রীর নির্দেশনা থাকার পরো এসব বিবাহিতদের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক পদ ছাড়াতে পারেনি।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের প্রথম ভাগে ধারা ৫ এর গ উপধারা অনুযায়ী ” বিবাহিত, ব্যবসায়ী ও চাকুরীতে নিয়োজিত কোন ছাত্র ও ছাত্রী ছাত্রলীগের কর্মকর্তা হতে পারবে না। একটি সংগঠন তার গঠনতন্ত্র মোতাবেক পরিচালিত হতে হয়, সেক্ষেত্রে গঠনতন্ত্র মোতাবেক বিবাহিতরা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলেও তাদের পদ বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা৷ কিন্তু দেশের ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনের মধ্যে গঠনতন্ত্রকে অনুসরণ না করার রেওয়াজ শুরু হয়েছে। সেই সাথে শিবির সহ অন্য সংগঠনের মতাদর্শিদের শীর্ষ পদে রেখে কমিটি গঠনের একাধিক ঘটনা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সর্বশেষ ছাত্রলীগের সম্মেলনে শীর্ষ নেতৃত্ব বাছায়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও যথেষ্ঠ বেগ পেতে হয়৷ পরে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার দীর্ষদিন পর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষনে হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন এখনো পক্রিয়াধিন আছে।

আগে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক পদে থাকা নেতারা বিয়ের করলেও পারত পক্ষে সেটা গোপন রাখতো৷ কিন্তু সাম্প্রতিক সময় গুলোতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ছাত্রলীগের নেতারা বেশ ধুমধাম করেই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করছেন। আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারাও সেসব অনুষ্ঠান গুলোতে উপস্থিত থাকছেন৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম গুলোতে এমন আয়োজনের ছবি প্রচারিত হয়। বিয়ের পর আবার সেই ছাত্রলীগ নেতারা নিজ নিজ পদ নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে হাজির হচ্ছেন। বাংলাদেশ প্রেসের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে কেবল বিবাহিতই নয় এক বা একাধিক সন্তানের জনকরাও এখনো নিজেদের ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দেন৷

এই বিষয়ে কেন্দ্রী ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য (সোহাগ-নাজমুল) এডভোকেট এস এম রাশেদ বাংলাদেশ প্রেসকে বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন৷ এই সংগঠনের একটি গঠনিতন্ত্র আছে যেটাতে বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনা ছিলো। এখন গঠনতন্ত্রের বাহিরে গিয়ে কিংবা না মেনে কেউ যদি পদ আগলে রাখে কিংবা পদে অসিন হয় সেই নেতৃত্বের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন আদৌ আশাকরা যায় কিনা সন্দেহ ৷ বর্তমান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কমিটি যেহেতু জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজ দ্বায়িত্বে গঠন করছে আমরা আশা করবো এই বিষয়টি তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন৷

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানির সাথে এই বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্ঠা করা হলেও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। এই বিষয়ে জানতে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরীর পূর্ব পর্যন্ত কোন জবাব মেলেনি৷ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বিগত কমিটির সদস্য রোমেল বড়ুয়া রাহুলকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, “একেবারেই যে স্বিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি সেটা বলবো না তবে হ্যা বেশীর ভাগ বিবাহিতরাই পদ ছাড়েছি।” কেন তাদের বিষয়ে স্বিদ্ধান্ত নিতে বিগত কমিটি ব্যর্থ হয়েছে, এই প্রশ্নের জবাবে রাহুল বলেন, ” আসলে বিগত দিনে সারা দেশের বিভিন্ন কমিটি গঠন নিয়ে বেশ বেগ পেতে হয়েছে সেই সাথে বিগত সভাপতি সাধারণ সম্পাদক হয়তো এই স্বিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সাংগঠনিক জেলা গুলোর সাথে সেভাবে সমন্নয় করতে পারেনি।

এই বিষয়ে আমি চট্টগ্রামের কথা বলতে পারি, কেন্দ্র এমন ঘোষনা দিলেও মহানগর কমিটিকে এই বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করার কোন নির্দেশনা দিয়েছিলো বলে আমার জানা নাই৷ আর মহানগর সভাপতি সাধারণ সম্পাদকরা চাইলেও কাউকে বহিষ্কার করতে পারে না। সবাইকে কেন্দ্রের স্বিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হয়৷ তবে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিবাহিতরা আর স্থান পাবেনা বলে জানান এই ছাত্রনেতা৷

নিউজ টি শেয়ার করুন..

সর্বশেষ খবর

আরো খবর