নগরীর বেসরকারি বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ জাহেদ খানের করা এই মামলায় জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে সোমবার দুপুরে চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম মো. ওসমান গনি এ আদেশ দেন।
রনির আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী দ্যা টাইমস অফ বিডি ডটকমকে বলেন, উচ্চ আদালত থেকে রনি এক মাসের জামিন নিয়েছিল।
“আইন অনুসারে ওই সময়ের মধ্যে নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করতে হয়। আজ জামিনের আবেদন করা হলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন।”
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী সাহাবুদ্দিন আহমদ দ্যা টাইমস অফ বিডি ডটকমকে বলেন, আদালত রনির করা জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
বেলা পৌনে ১টার দিকে পুলিশ কর্মকর্তা কাজী সাহাবুদ্দিন আহমদ জানান, আদেশের পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
নগরীর চকবাজার এলাকার মতি টাওয়ার নামের একটি ভবনের পঞ্চম তলায় বিজ্ঞান কলেজের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ওই ভবনের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় বিপণিকেন্দ্র।
এবছরের এইচএসসি পরীক্ষার প্রবেশপথ সংগ্রহ করতে গেলে পাঁচ হাজার টাকা করে উন্নয়ন ফি দাবি করা হয় বলে অভিযোগ অভিভাবকদের।
৩১ মার্চ বিজ্ঞান কলেজে অভিভাবকদের অবস্থানের মধ্যেই সামনে সড়কে ককটেল বিস্ফোরণ ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে খবর পেয়ে নিজ অনুসারীদের নিয়ে সেখানে যান রনি।
ওইদিন ‘উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে জাহেদ খানকে চেম্বারে প্রবেশ করানোর এক পর্যায়ে তার শরীরে আঘাত’ করার কথা স্বীকার করে পরে এক বিবৃতিতে এজন্য দুঃখ প্রকাশ করেন রনি।
৩১ মার্চের ওই ঘটনার পর সে রাতে নগরীর চকবাজার থানায় বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ জাহেদ খানের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেন রনি।
এরপর ৪ এপ্রিল রাতে চকবাজার থানায় ছাত্রলীগ নেতা রনির বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকার চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা করেন জাহেদ খান।
নগর ছাত্রলীগ নেতা রনি গত কয়েক বছর ধরেই নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্ধিত বেতন-ফি বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তার আন্দোলনের কারণে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেতন ফি কমানো ও আদায় করা বর্ধিত টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছে।
এর আগে ২০১৬ সালের ৭ মে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া বোর্ড স্কুল কেন্দ্রের বাইরে থেকে একটি নাইন এমএম পিস্তল ও ১৫ রাউন্ড গুলি এবং একটি সিল ও নগদ ২৬ হাজার টাকাসহ রনিকে গ্রেপ্তার করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
পরে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অপরাধে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারিক হাকিম হারুন আর রশিদ তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। সেসময় ৫২ দিন পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে মুক্তি পান রনি।
এছাড়া অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করে পুলিশ।
ওই দুই মামলা ছাড়াও নগরীর এমএ আজিজ আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিং পুল নির্মাণবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায়ও তার বিরুদ্ধে মামলা আছে।
এছাড়া নগরীর জিইসি মোড়ের একটি কোচিং সেন্টারের মালিক রাশেদ মিয়াও রনির বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা করেন।
রাশেদ মিয়াকে মারধরের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি চান রনি।
এরপর ২০ এপ্রিল আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে অব্যাহতির ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
সবশেষ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ শেয়ার করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় মানহানির অভিযোগে গত ১৬ মে রনির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন নগর ছাত্রলীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য তানজিরুল হক চৌধুরী।
এরপর ৩১ মে বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে একটি মামলা করেন রনি।
চট্টগ্রামের রাজনীতিতে নুরুল আজিম রনি নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজকে শিবির মুক্ত করার কর্মসূচিতেও নেতৃত্বে ছিলেন রনি।