পর পর দুবার আওয়ামীলীগ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় আগামী সংসদ নির্বাচনে সেটাকেই পুঁজি হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন দলটি। তবে দলের মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান সংসদ সদস্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামীলীগ এর সহ সভাপতি এড. নুরুল আমিন রুহুল, সাবেক সংসদ সদস্য এয়ারভাইস মার্শাল(অব) মো. রফিকুল ইসলাম, আহসান গ্রুপের পরিচালক বিশিষ্ট শিল্পপতি আওয়ামীলীগ নেতা ইসফাক আহসান, মতলব উত্তর উপজেলা চেয়ারম্যান ও চাঁদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সহ.সভাপতি মন্জুর আহমেদ, কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সহ অর্থ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খোকা পাটোয়ারী,
অন্যদিকে বিএনপির প্রভাবশালী সংসদ সদস্য মো. নুরুল হুদার মৃত্যুর পর এ আসনে দলটি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে বিকল্প প্রার্থীও তৈরি হয়েছে ধানের শীষ প্রতীকের। তিনি হলেন নুরুল হুদার যোগ্য উত্তরসূরী জননেতা তানভীর হুদা শুভ, তিনি পিতার অবর্তমানে দলীয় নেতাকর্মীদের একত্রিত করে চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করতে কাজ করে যাচ্ছেন, বিএনপি থেকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মনোনয়ন চাইতে পারেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক ছাত্রনেতা আতাউর রহমান ঢালী , বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন , সাবেক ছাত্রনেতা বৃহত্তর মতলব বিএনপি সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিষ্টার ওবায়েদুর রহমান টিপু, মতলব দক্ষিন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, চাঁদপুর জেলা বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক এম.এ শুক্কুর পাটোয়ারী।
মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলা নিয়ে চাঁদপুর-২ সংসদীয় আসন। বিগত দশটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে চারবার, বিএনপি তিনবার ও জাতীয় পার্টি দুইবার এ আসনে বিজয়ী হয়েছে, একবার আসনটি পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। প্রথম সংসদ সদস্য হন আওয়ামীলীগের গোলাম মোর্শেদ ফারুকী, ২য় সংসদ নির্বাচনে সতন্ত্র প্রার্থী জননেতা নুরুল হুদা ২৭বছর বয়সে তালা মার্কা প্রতিকে বিএনপি প্রার্থী কে হরিয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয় লাভ করেন।পরে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে জয় লাভ করে চার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি দীর্ঘ দিন তথ্য ও সংস্থাপন মন্ত্রনালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দ্বায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বিএনপির প্রার্থী মো. নুরুল হুদাকে হারিয়ে সংসদ সদস্য হন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১০ম সংসদ নির্বাচনে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তিনি১৯৮৬ ও ৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-২ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। কিন্তু তিনি বিএনপির প্রার্থী মো. নুরুল হুদার কাছে হেরে যান। অবশ্য ’৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মায়া। তখন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পান তিনি। ২০০১ সালের নির্বাচনে মায়াকে হারিয়ে দেন মো. নুরুল হুদা। ২০০৭ সালে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মায়া দেশের বাইরে থাকায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করেন এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) মো. রফিকুল ইসলাম।
বিএনপি : এই আসনের জনপ্রিয় নেতা মো. নুরুল হুদার মৃত্যুতে ও ক্ষমতাসীনদের রাজনীতির মারপ্যাঁচে ন্যুয়ে পড়া বিএনপি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানি করছে আওয়ামী লীগ। এতে শুধু বিএনপিই নয়, সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও প্রতিপক্ষের মামলা আর হামলার ভয়ে এলাকা ছাড়া। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মরহুম নুরুল হুদার যোগ্য সন্তান তানভীর হুদা নেতৃত্বে শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টায় আছে। এ আসনে বিএনপির টিকিটে তিনবার সংসদ সদস্য হয়েছেন মো. নুরুল হুদা। আর একবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। তিনি বিএনপি সরকারের প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর চাঁদপুর-২ আসনে দলের হাল ধরেন তাঁরই পুত্র তানভীর হুদা। তানভীর হুদা জানান আমি নির্বাচন নিয়ে ভাবছিনা আমার নেত্রী আমার মা আজ কারাগারে, বিএনপি নীতি নির্ধারক শ্রদ্ধেয়জন ঈদের পরে সরকার পতনের যে ডাক দেবে আমরা উক্ত ডাকে সারা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করে এক নির্দলীয় সরকারের মাধ্যমে জনগনের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেবার কথা ভাবছি। দল আমার এলাকার জনগনের হৃদয়ের স্পন্দনের ভাষা বুঝে আমাকে মনোনয়ন দিলে দলকে আসনটি পুনঃউদ্ধার করে দিতে পারবো ইনশাআল্লাহ । অপরদিকে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় স্পেনের অনারারি কনসুলার জেনারেল ড. জালাল উদ্দিন সফল ব্যবসায়ী ও মুদ্রা বিশেষজ্ঞ হিসেবে দেশ-বিদেশে সুখ্যাতি রয়েছে তাঁর। বিএনপির কেন্দ্র, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কমিটিতে আছেন জালাল উদ্দিন। ২০০৬ সালে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন দল থেকে মনোনয়ন না দিলে সতন্ত্রপ্রার্থী হয়ে আম মার্ক নিয়ে নির্বাচন করেন তিনি, কিন্তু তখন নির্বাচন হয়নি। পরে ২০০৮ সালেও বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আনারস মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেন তিনি।
তবে বিএনপি ছেড়ে যাননি জালাল—এমন কথা জানালেন মতলব উত্তর উপজেলা শাখা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক জিতু। একই কমিটির সভাপতি আহসানুল হক ফটিক বলেন, দুর্দিনে তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছেন এবং বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিয়েছেন ড. জালাল।
বিএনপি মতলব দক্ষিণ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এমরান হোসেন মিলন বলেন, ‘আসনটি আমাদের ফিরিয়ে আনতে হলে যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হবে। দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার হয়েই কাজ করবো আমরা,মতলব দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই বলেন,সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত হলে এই আসনটি বিএনপির জন্য পুনরুদ্ধার সহজ হবে।
মতলব পৌরসভার সাবেক মেয়র এনামুল হক বাদল বলেন, ‘বিএনপির মাঠের রাজনীতিতে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। তাই আগামী নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে সেই ঐক্য আমরা প্রমাণ করব। ’
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন, ‘চাঁদপুর-২ আসনের মতলব উত্তর ও দক্ষিণের সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগের দুঃশাসন থেকে মুক্তি চায়। সে জন্য তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটের মাধ্যমে পরিবর্তনে আগ্রহী। এলাকার নির্যাতিত সাধারণ মানুষ এবং দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী-সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। ’ তিনি আরো বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি তথা জাতীয়তাবাদী আদর্শের রাজনীতি করছি। তাই দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের আগ্রহের কারণে আবারও আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা দাবি করছি। ’
বিএনপিপন্থী আইনজীবী ব্যারিষ্টার ওবায়দুর রহমান টিপু জানান চাঁদপুর- ২ আসনটি বিএনপি র ঘাটি। লেভেল প্লেইং ফিল্ডে নির্বাচন হলে আর দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি জনগনের রায় নিয়েই সফল হবো ইনশাআল্লাহ । তাছাড়া দল যাকে মনোনয়ন দিবে আমি দলের স্বার্থে কাজ করে যাবো।
ছেংগারচর পৌর ছাত্রদলের সভাপতি শাহরিয়ার কামাল দ্যাটাইমসঅফবিডি.কম কে জানান বর্তমান সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের হামলা মামলা পরও আলহাজ ডঃ জালাল উদ্দিন এলাকার নির্যাতিত সাধারণ মানুষ এবং দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী-সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বলে তিনি জানান।
আওয়ামী লীগ : আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়ন সমাবেশের নামে প্রতি সপ্তাহে জনসংযোগ করছেন তিনি।
মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া তাঁর নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়ন সমাবেশ করে প্রতিনিয়ত নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করছেন। এসব সমাবেশে তাঁর সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন ছেলে সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপু। সমাবেশগুলোতে মায়া চৌধুরীর বক্তব্য একটাই—আগামী নির্বাচনে এলাকার উন্নয়নের কারণে নৌকার জয় সুনিশ্চিত।একই দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগের নেতা নুরুল আমিন রুহুল। বিগত ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে তৃণমূলের ভোটে এগিয়ে ছিলেন তিনি। ছাত্রলীগের সাবেক নেতা নুরুল আমিন রুহুল বৃহত্তর মতলবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার পেছনে অনেক অবদান রেখেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা এডঃ মহসিন মিয়া মানিক। তিনি বলেন, ‘রুহুল ভাইয়ের পেছনে এখনো তৃণমূলের অসংখ্য নেতাকর্মী আছে। ’
ছেঙ্গারচর পৌর আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সবদিক বিবেচনায় নিলে নুরুল আমিন রুহুল অবশ্যই মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন। ’
ছেঙ্গারচর পৌরসভার কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা মো. জামান বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে মনোনয়ন পরিবর্তন প্রয়োজন। কারণ, বিশেষ একটি গোষ্ঠী নিজেদের মতো করে শাসন করছে। ফলে এখানে গণতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে না। ’
মনোনয়নপ্রত্যাশী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুরুল আমিন রুহুল বলেন, ‘বিগত দিনে জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলাম। কিন্তু কতিপয় কুচক্রী মহলের কারসাজিতে সামান্য ভোটে হেরে যাই। ’ তিনি আরো বলেন, ‘দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। মায়া চৌধুরী বিএনপি-জাতীয় পার্টির লোকদের দলে ভিড়িয়ে হাইব্রিড আওয়ামী লীগে পরিণত করেছেন। ’
রুহুল আশা করেন, তাঁর অতীত কর্মকাণ্ড বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামী লীগ আগামী সংসদ নির্বাচনে তাঁকেই মূল্যায়ন করবে।
আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য এয়ারভাইস মার্শাল ( অব) মো. রফিকুল ইসলাম জানান আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগ তাকে মূল্যায়ন করবে, এছাড়া নেত্রী যাকে মনোনয়ন দিবে তিনি তার হয়েই কাজ করবেন। আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী বিশিষ্ট শিল্পপতি ইসফাক আহসান জানান জনগন পরিবর্তন চায়, আমি দল থেকে মনোনয়ন পাইলে জনগনের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে। তার পরও মানবতার মা জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দিবে তার বিজয় সু.নিশ্চিত করতে কাজ করে যাবো ইনশাআল্লাহ ।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দল জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে আলোচনায় আছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সাইদুর রহমান, চাঁদপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারন সম্পাদক মিজানুর রহমান খান ও মতলব উত্তর উপজেলা যুব সংহতির সভাপতি এড. শামীমুল ইসলাম। জাতীয় পার্টির শাসনামলে এই আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) শামছুল হক। তিনি ওই সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীও ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর এখানে দলটি এখন নিষ্ক্রিয় প্রায়।
দ্যাটাইমসঅফবিডি.কম/০৭/০৭/১৮