দ্যাটাইমসঅফবিডি.কম: ঢাকা -রবিবার -১৪ আগস্ট ২০১৮ : ২০ শ্রাবণ ১৪২৫
একজনই বাঙালি মোস্তাফা জব্বার চার দশকেরও বেশি সময় আগে বাংলার মাটিকে রক্ত দিয়ে পবিত্র করে যাকে সপরিবারে শহীদ হতে হয়েছিলো তার সম্পর্কে দুটি বাক্য লিখতে আর কার কি হয় জানিনা, আমারতো হাত কাঁপে। কোনভাবেই আমি তাকে নিয়ে লেখার সাহস পাইনাই। এতো বড় মাপের মানুষ তাকে মূল্যায়ন করার ক্ষমতা আমার মতো নগন্য একজনের থাকতেই পারেনা। আমি তার ভক্ত-সৈনিক। আমার চারপাশে কিংবা ইতিহাসের পাতায় তার সাথে তূলনীয় কোন রাজনীতিককে আমি দেখিনা। বাংলাদেশতো দূরের কথা, সারা দুনিয়াতেই তিনি একজনই। তিনি কেবল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী নন।
তাকে আমি মনে করি একজনই বাঙালী, যার মাঝে বাঙালীত্বের পুরোটা আছে এবং সেজন্য তিনি সকল বাঙালীর, সকল বাংলা ভাষাভাষীর অনুসরণীয়, অনুকরণীয় এবং পরম শ্রদ্ধার পাত্র। চারপাশে তাকে নিয়ে কোটি কোটি হরফ দেখি। খণ্ড খণ্ড বই লেখা হয়েছে তাকে নিয়ে। যিনি যেভাবে চান তাকে সেভাবেই তিনি তাকে উপস্থাপন করছেন। কেন জানি মনে হচ্ছে তার নীতি, আদর্শ বা কর্মপন্থাকে আমরা এখনও সেইভাবে মূল্যায়ন করিনা যেভাবে সেটি করা দরকার। অনেক ভাবনা থেকে তার সম্পর্কে একটি দুই পাতার নিবন্ধ লেখার সাহসও এতোদিন পাইনি। এবার যখন ৬৯ বছর পার করেছি তখন মনে হলো এই মহামানব সম্পর্কে নিজের ভাবনাটা প্রকাশ করে যাওয়াটা নিজের কাছে জবাবদিহি করার মতো একটি বিষয় হতে পারে। নইলে এক সময়ে মনে হবে আমি তাকে যেমনটি ভাবি সেটিতো কাউকে বলিনি।
মনে মনে ভাবছি যদি সময় পাই তবে আমি তাকে একটু বিস্তারিতভাবেই মূল্যায়ন করবো। তার নাম শুনেছি ৬৬ সালে, যখন ঢাকা কলেজে পড়ার সময়ে ছাত্রলীগ করা শুরু করি। সেখানেই ছয় দফা নামক একটি লিফলেট বিলাতে গিয়ে প্রথম জেনেছি যে বাঙালীরা তাদের প্রাপ্য পায়না। তার আগে সারাটা স্কুল জীবনে পাক সর জমিন সাদ বাদ গাওয়াইয়ে পাকিস্তানী বানাবার চেষ্টা করা হয়েছে। ১৯৬৫ সাল ছিলো প্রথম যখন ঢাকা শহরে এসে লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর কুশ পুত্তলিকা জ্বালাতে দেখেছি। ৬৬ সালে ৬ দফা পাঠ করে জীবনে প্রথম অনুভব করলাম, আমি বাঙালী এবং আমার একটি আলাদা অর্থনীতি, রাজনীতি, ইতিহাস, একটি আলাদা ভাষা, আলাদা সংস্কৃতি ও আলাদা ভূখণ্ড রয়েছে।
৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে শুনলাম, বাঙালীদের একজনই নেতা তার নাম শেখ মুজিবুর রহমান। তারপর ১১ দফায় সেই ছয় দফা যুক্ত হয় আর রাজপথে তার মুক্তির দাবিতে মিছিল করা দিয়ে নিজের শ্লোগান দেবার ক্ষমতাকে শাণিত করি। ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগন্য একজন কর্মী হিসেবে তার সামনে যাবার কোন কারণই ছিলোনা।
তবে যারা তার কাছে থাকতেন তাদের সাথে আমরা দিন-রাত কাটাতাম বলে তার ব্যক্তিগত ভাবনা-জীবনাচার বা রাজনৈতিক দর্শন জানতে পারতাম। সেই মানুষটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার জীবন নিয়ে ইতিহাস লেখার কোন ইচ্ছাই আমার নাই। অনেকে লিখেছেন, লিখবেন এবং সারা বিশ্ব তাকে নিয়ে গবেষণা করবে, বর্তমানের প্রেক্ষিতে এটাই স্বাভাবিক। গত কয়েক বছরে তার কন্যা বাংলার স্বর্ণকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে যেখানে স্থাপন করেছেন তাতে সারা বিশ্বকে জানতেই হবে, কে এই দেশের জনক এই শেখ মুজিবুর রহমান। এক সময়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের তলাহীন ঝুড়ির দেশ এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সামনে আদর্শ দেশ, এই রূপান্তরটাতো আমাদেরকে জানতেই হবে। । আমাদের এই দেশটির জনক প্রথম আমাকে আকৃষ্ট করেন তার অতি সাধারন জীবন যাপন, সহজ সরল অভিব্যক্তি এবং স্পষ্টবাদিতায়। একবাক্যে তার বাঙালীত্বে।
ঢাকা কলেজ থেকেই তার বড় ছেলে শেখ কামালকে চিনতাম। শেখ কামালের মাঝে তার পারিবারিক ধারার প্রতিপালন ছিলো। ৭০ সালে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে তিনি যখন অবিসংবাদিত নেতা তখন তার জ্যেষ্ঠ্য কন্যা শেখ হাসিনার সাথে পরিচয় হয়। তিনি তখন বিবাহিতা। তাকে দেখে আমি আরও অভিভূত হই। যার অঙ্গুলি হেলনে পাকিস্তান কেপে ওঠে সেই মানুষটির বড় মেয়ে তাতের শাড়ি পরে সহপাঠীদের সাথে আর দশটা সাধারণ মানুষের মতোই মিশে, এটি শেখ হাসিনাকে না দেখলে আমি বিশ্বাস করতামনা। শেখ কামালও তাই ছিলো। আমাদের সাথে নাটক করতো। তাকে দেখেও কেউ ভাবতে পারতোনা যে, তার পিতা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবার জন্য জনগণের রায় পেয়ে আছেন। আমি স্মরণ করতে পারি বঙ্গবন্ধু কেবল তার রাজনৈতিক দল নয়, ছাত্র বা শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন।
এমনকি তাদের পারিবারিক তথ্যও মনে রাখতেন। সেই মানুষটির সাধারণ মূল্যায়ন যখন আমরা করি তখন কেবল তার বাংলাদেশ সৃষ্টির বিষয়টিকে প্রাধ্যান্য দিই। যে সময়ে ব্রিটিশরা পুরা উপমহাদেশটিকে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে কলঙ্কিত করে দুটি অদ্ভুত রাষ্ট্র বানিয়ে দিয়ে গিয়েছিলো এবং পুরো উপ মহাদেশের তাবত বড় বড় রাজনীতিবিদরা সেই সাম্প্রদায়িকতাকেই মাথায় তুলে নিয়েছিলেন তখন তিনি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের বিপরীতে একটি ভাষাভিত্তিক আধুনিক জাতিরাষ্ট্র গঠনের দূরদর্শী স্বপ্ন দেখেন। ভাবা যায় যে, পাকিস্তান তৈরির ৫ মাসের মাঝে জিন্নার মুখের ওপর কেউ না না চিৎকার করে নিজের মাতৃভাষার দাবিকে উত্থাপন করতে পারেন। এই অঞ্চলে ভাষারাষ্ট্র ধারনা তখন মোটেই গুরুত্ব পায়নাই। ভারত বহুভাষিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠে। খুব সঙ্গত কারণেই ভারতের ধর্ম রাষ্ট্র হবারও খুব সুযোগ ছিলোনা।
তবুও ব্রিটিশরা ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ব্যবস্থা করেছিলো। ভারতের নেতারাও সেটি প্রচ্ছন্নভাবে মেনে নিয়েছিলেন। তবে পাকিস্তান হয়ে ওঠে উগ্র সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধু সেই মানুষটি যিনি বাংলাদেশের অন্তরকে অনুভব করেন এবং উগ্র সাম্প্রদায়িকতা যে এই অঞ্চলের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এবং বাঙালী যে তার ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতিকে সবার ওপরে ঠাই দেয় এবং তার এই জীবনধারায় ধর্ম যে কেবল ব্যক্তিগত বিষয় এবং রাষ্ট্রের রাজনীতির প্রধান শক্তি নয় সেটি উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। আমি নিজে অভিভূত হই যখন দেখি যে তিনি পাকিস্তানের কাঠামোতে থেকে তার রাজনৈতিক সংগঠনের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি উপড়ে ফেলে দিতে পেরেছিলেন। যে মানুষটি নিজেকে স্পষ্ট করে দুন